বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ের অভিবাভকের চাহিদা যেমন হয়। Sabbir Hossain Rubel .

বিয়ে আমাদের অন্যতম একটা চাহিদা। যেটা পূরণ ব্যতিত নিজের দ্বীন পরিপূর্ণ হয়না। বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ের অভিবাভকের চাহিদা যেমন হয় সেটা নিয়ে আজকে আমাদের এই ছোট্ট আর্টিকেল। বিয়ে প্রয়োজনীয় একটা কাজ তবে সেটা কি আদৌ সহজ কোন ব্যাপার? মোটেও না। সব কিছুর চাইতে কঠিন যেটা সেটা হলো এই বিয়ে। 

ওমা তুমি বিয়ে করবে? কত বয়স হয়েছে? আচ্ছা তার আগে বলো , তুমি করোটা কি? কি খাওয়াবে?  এসব প্রশ্ন তো অহরহ। সে বিষয়ে লিখতে গেলে কয়েকশ পাতার রচনা হয়ে যাবে তবুও লিখে শেষ করা যাবে না। তাই আজকে আর সেদিকে যাবো না। আজকে আমরা কথা বলব ছেলে-মেয়ে বাবা-মায়ের চাওয়া পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।

বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ের অভিবাভকের চাহিদা যেমন হয়। Sabbir Hossain Rubel .

বিয়ে মানে শুধু একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মিলনের নাম না। একটা বিয়ের মাধ্যমে ২ টা পরিবারের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে ছেলে-মেয়ে। তবে বিয়ের আগেই আমাদের সমাজে দেখা যায় ছেলে বা মেয়ের পরিবারের আকাশচুম্বী স্বপ্ন আর চাওয়া। এটা মোটামুটি ২ পরিবারের মাঝে দেখা যায়। তবে অনেকেই এক চেটিয়া শুধু ছেলে বা মেয়ের পরিবারের দোষ দিয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ চাঁদের আলো কবিতা। চাঁদ কে নিয়ে কবিতা। চাঁদের সৌন্দর্য্য কে নিয়ে কবিতা।

ছেলের বাবা-মায়ের চাওয়া যেমন থাকে। 

একজন ছেলের জন্মদাতা পিতা আর মাতা হিসেবে একটা পরিবারের যেন চাওয়ার কোন কমতি নেই। কিন্তু চাওয়ার সেই ইচ্ছেটা তারা কখনো প্রকাশ করতে চায় না। এর কারণ হলো চক্ষুলজ্জা। তাই তারা মনে মনে ভাবে যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আসলে মন্দ হয় না। তারমানে এই যে তারা মুখে বলবে না কিন্তু সব কিছু দিয়ে হাজির করতে হবে। তবে তারা মুখে স্পষ্টভাবে না বললেও বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে সে সব বুঝিয়ে দিতে বেশ পটু। 

এই যে ধরুন আমার ছেলে আবার পায়ে হেটে কোথাও যেতে চায় না। আগে যাও বা যেত এখন আর এক কদমও নড়তে চায় না। কি যে বিপদে পড়লাম। এর মানে হলো যে ছেলের পা মাটি থেকে উপরে তোলার ব্যবস্থ্যা করতে হবে। তেমনিভাবে আবার বলবে কিছু দিন আগে নতুন ঘর-বাড়ি করে হাত একদম ফাকা। ফার্নিচার কিনার সময়ই পেলাম না। ছেলে ধরে গেল বিয়ের বায়না। কি আর করার ভাবলাম ঠিক আছে আগে বিয়েই দিয়ে নেই।

আরো পড়ুনঃ সমাজের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ | আল্লাহ যদি সবাই কে সমান বানাতো তাহলে কি হত?

এর আগে একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। সেই সময়ে এক ভাইকে এক লোক প্রশ্ন করল যে ভাই আপনার ছেলেকে বিয়ে দিবেন না। ভাই বলল যে, "ছেলে যেহেতু হয়ছে বিয়ে তো দিয়েই হবে"। তারপরে ঐ লোক বলল যে আপনার আবার কোন চাওয়া আছে নাকি মেয়ের পরিবারের থেকে? ভাই তখন বলল যে," নাহ! এটা কেমন কথা। আমি কিচ্ছু নেবো না মেয়ের বাড়ি থেকে। শুধু তুমি দেখবা বাবা মায়ের একটাই যেন মেয়ে হয়। আর কোন ভাই বোন যেন না থাকে। আর হ্যা অবশ্যই বড়লোক হওয়া লাগবে কিন্তু।  তাছাড়া বিয়ে দেবো না আমার ছেলেকে।যদি বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়েকে এনে দিতে পারো তাহলে আমার ছেলের বিয়ে দেবো? একটা সুতাও নেবো না আমি।" 

শুনে আমি মনে মনে ভাবলাম যে এটাই কি তাহলে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির শ্রেষ্ট উদাহরণ নয়? তুমি যদি কিছু নাই নাও তাহলে তোমার বড়লোক বিয়াই কেন লাগবে। অপরিচিতা গল্পের রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটুকু মনে পড়ে গেল যে বিয়াই বড়লোক না হলেও দিতে কসুর করিবে না এমনটাই চাই।

তাছাড়া অনেকে প্রকাশ্যেও চেয়ে বসে। টাকা , ফার্নিচার, বাইক, বিভিন্ন প্রসাধনীসামগ্রী থেকে শুরু করে বিছানার চাদর পর্যন্ত আশা করে ছেলের পরিবার। এগুলা যেন এখন বিয়েরই একটা রীতি। দিতে না পারলে মেয়ের মানসম্মান শেষ। সেই মেয়েকে কত কথা যে শুনতে সেটা আর বলার উপেক্ষা রাখে না।

মেয়ের বাবা-মায়ের চাওয়া যেমন থাকে। 

মেয়ের বাবা-মায়ের আর কি চাহিদা তাইনা? কোন দিন কি শুনছেন মেয়ের পরিবার যৌতুক চেয়েছে?  তবে আমরা একাধিক বার দেখেছি যৌতুকের চেয়ে কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বিষয়টা অই বড়লোক বিয়াই এর একমাত্র মেয়ের মতই। মেয়ের বাবা-মাও চায় যেন তার মেয়ের বিয়ে এক ছেলেওয়ালা কোন পরিবারের সাথেই দিতে পারে। এত গেল মনের একটা বাসনা মাত্র। 

বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ের অভিবাভকের চাহিদা যেমন হয়। Sabbir Hossain Rubel .

মেয়ের মা হিসেবে মায়ের একটা স্পেশাল চাওয়া থাকে। সেটা হলো যে ছেলে কিন্তু অবশ্যই সরকারি চাকুরীজীবী হতে হবে। এসব অন্য সব কাজের কোন লাইফ গ্যারান্টি নাই। তবে প্রকৃতি আর সময় ভেবে এই চাওয়াটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। যেমন ধরুন কিছুদিন আগে প্রবাসী ছেলেদের বেশ চাহিদা ছিল। ছেলে বিদেশ থাকে এটা শুনলেই মেয়ের মা রাজি। তবে এখন বিদেশী ছেলের চাহিদা একটু কমে গেছে। কিন্তু বিদেশী ছেলেদের অবহেলা করার সুযোগ মোটেও নাই। কারণ দেশের চাকা ঘুড়াচ্ছে এই প্রবাসীরাই। দেশের যে অবস্থা তাতে যদি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স না আসত তাহলে বাংলাদেশ কোথায় যেত তা কে জানে।

আরো পড়ুনঃ লক ডাউন কবিতা। 

অবশ্য কোন ভাবেই মেয়ের মা ছাড় দিতে প্রস্তুত না। সরকারি চাকরি না হলেও ছেলে যেন বড়লোক হয়। ভালো কর্মের ব্যবস্থ্যা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে ভুল না হয়। যেন তার পার মেয়েকে নিলামে তুলে ফেলে। যে কে বেশি টাকা দিয়ে কিনতে পারে? যদি বলা হয় ছেলেটা ভালো আছে কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থ্যা একটু খারাপ। মেয়ের মা গম্ভীর ভাবে বলবে তোমাকে বলেছি না এসব মুখে না আনতে? ছেলে মানুষ আবার খারাপ কি? টাকা পয়সা না থাকলে ভালো ধুয়ে কে পানি খাবে?

আবার যদি বলা হয় যে ছেলে অনেক বড়লোক , আল্লাহ দিলে টাকা পয়সার অভাব নাই কিন্তু ছেলের একটা বদ অভ্যাস আছে। মাঝে মাঝে একটু নেশাপানি করে আর ঐ একটু মেয়েছেলেরে সাথে রাতে নিজের সুখ-দুঃখের আলাপ করতে যায়। তাছাড়াও এর আগে একটা বিয়ে হয়েছিল, অই মেয়েটা বেশি একটা ভালো ছিল না প্রেমিকের সাথে টুকুস...। এর পরেও মেয়ের মায়ের কাছে এগুলা তেমন কোন ব্যাপার না। যদি টাকা পয়সা ঠিকঠাক থাকে। এই বলে সান্ত্বনা দিবে বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি আরো কত কি? 

কিন্তু কখনো একটা মিডল ক্লাস পরিবারের ছেলেকে মেনে নিবে না এটা ভেবে যে এই ছেলেটাও কাজ করলে ভবিষ্যতে হয় এমন থাকবে না। চেঞ্জ হবে সব কিছু। সেও চাইলে সব কিছু অর্জন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা তো অনেক কঠিন তাইনা। 

আরো পড়ুনঃ Realme 8 5g price in Bangladesh

এমনকি শেষ প্রান্তে এসেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নাড়াজ। বিয়ের সময়  কাবিননামা কিন্তু ৫-১০ লাখ হতেই হবে। মেয়ের বাবার একটাই কথা আমার মেয়ের জীবনের ভরসা কি? কিসের ভিত্তিতে আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারি এভাবে? এভাবে দেখা যায় বিয়ের সময় সম্পূর্ণ কাবিননামা পরিশোধই করা হয় না। আর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই তা পরিশোধ করতে হবে। তাই সেখানে বিয়েটা শুদ্ধ কিনা সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ। 

এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিকার কী?  

সত্যি বলতে এর যেন কোন প্রতিকার নেই। দিনকে দিন এর চাহিদা আরো ব্যাপক হচ্ছে। এর ফলে ঘটছে ডিভোর্স। ডিভোর্সে চাহিদা এত বেড়ে চলেছে যা অতুলনীয়। কই আগেকার মানুষ তো এত বিচ্ছেদে আগ্রহী ছিল না। আগেকার মানুষ কি অনেক বড়লোক ছিল? একটা সংসার সুন্দর ভাবে চালানোর জন্য অনেক বড়লোক হওয়াটা কি খুব জরুরি? একটা মেয়ের গায়ের সাদা চামড়া কি খুব দরকার বিয়ের টিকিয়ে রাখার জন্য? 

আরো পড়ুনঃ Ghore bose freelancing course free download by Joyeta Banerjee

তাহলে তো পূর্ণিমার মত সুন্দরীর একাধিক বার ডিভোর্স হত না। বিলগেটসের মত বিশ্বের সেরা ধনীর বউ ডিভোর্স নিত না। এসব রূপ সৌন্দর্য্য টাকা পয়সা আসলে কোন ব্যাপার না। কার সাথে কে সুখী সেটাই বড় কথা। 

এই উচ্চাভিলাষী মনোভাব আমাদের ধীরে ধীরের অন্ধকার এক প্রজন্মের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে শুধুই সার্থ্যপরতা। এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে আমাদের মনের বুঝ খুবই দরকার। যে আসরা আসলে কি পেলে সুখী হব? বা সুখের প্রকৃত অর্থটাই বা কী? যখন আমরা নিজে থেকে নিজেদের বুঝাতে পারব তখনই হয়ত এর কিছুটা প্রতিকার সম্ভব হবে।

শেষ কথা  

বিয়ে একটা ইবাদাত। সেই বিয়েকে যারা বানিজ্য বানিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য বলতে চাই যে দুনিয়াটা ২ দিনের। তাই যে যার সাথে সুখী তার সাথেই তাকেই মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। শুধু দেখুন যে ছেলে বা মেয়ের কাজ কর্ম বা আচার ব্যবহার ভালো আছে কিনা। বিয়েটাকে কঠিন করা মানে সমাজের জন্য একটা ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসা। কারণ যেখানে বিয়ে করা কঠিন সেখানে পাপ কাজ করা সহজ (আল-হাদিস)। তাই সেই বিয়েকে সহজ করে দিয়ে নিজের পথ চলাকে সুগম করুন।

আরো পড়ুনঃ 10 minute school English Grammar Crash Course free download

টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি সবই সাময়িক সময়ের জন্য। তারপরে এসবের অনেক দরকার আছে। আমি বলছি না যে টাকা পয়সার কোন দরকার নাই। টাকা পয়সা হলো সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিষ। তাই সময় থাকতে সেটাকে চিনে সঠিক ভাবে ব্যবহার করুন। অনেক টাকার দরকার নাই। অন্তত সুন্দর ভাবে চলার সক্ষমতা থাকলেই হবে। কারণ টাকা যেমনক্ষণস্থায়ী তেমনি দরকারি জিনিষ।তাই এটাকে অবহেলা করার বিন্দুমাত্র সাহস আমার নাই।

Sabbir Hoosain Rubel.