সমাজের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ | আল্লাহ যদি সবাই কে সমান বানাতো তাহলে কি হত?
বিশাল এই পৃথিবীর বুকে আমরা কতই না মানুষ দেখতে পারি। কেউ ধনী কেউ গরীব। কেউ বা কালো কেউ ফর্সা। সমাজের মানুষের মধ্য ভেদাভেদ নতুন কিছু না। এটা খুব প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। তার মানে আমি এটা বুঝাচ্ছি না যে আল্লাহ কাউকে সম্মান দিয়েছে আর কাউকে সম্মানচ্যুত করেছে। আল্লাহর কাছে সবাই সমান। কিন্তু তারপরেও নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে আল্লাহ একেক জনের অবস্থান একেক জায়গায় করে দিয়েছে। এটা হতে পারে কারো জন্য পরীক্ষা , আবার কারো জন্য হতে পারে এটাই তার সঠিক জায়গা।
মানুষের সম্মান কি আলাদা? - Is the respect of people different?
মানুষের সব চেয়ে বড় সম্মান হলো যে সে মানুষ। হতে পারে সে ধনী গরীব বা অন্য জাতের। আপনি নিজেকে দিয়ে ভাবুন যে, আপনি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাতে আপনার হাত আছে কত টুকু। আপনি কি নিজের ইচ্ছাতে ধনী ঘরে জন্ম নিতে পারছেন? নাকি আপনার ভাগ্য আপনাকে এই জায়গায় আপনার অবস্থান করে দিয়েছে। আপনার জন্ম হতে পারত দিন মজুর কোন শ্রমিক বা বস্তির কোন রিকশাচালক এর ঘরে। তাই ধনী বা টাকা পয়সার সাথে আল্লাহ সম্মান কে বেধে দেয় নাই।
মানুষের এই সামাজিক ব্যবধান গুলো তৈরী করেছি আমরা। আমরা মানুষের মাঝে কত স্তর বানিয়েছি তা হয়ত আমরা নিজেও জানিনা। মনে রাখবেন যে সম্মন আল্লাহ আপনাকে দিয়েছে সেই সম্মান আল্লাহ ছিনিয়েও নিতে পারে এক নিমিষে। অপরদিকে আল্লাহ কিন্তু বলেও দেয় নাই যে আমি ধনী মানুষদের সম্মান বেশি দিলাম। এখানে সম্মান মানে ক্ষমতা কে বুঝানো হচ্ছে না। সম্মান হচ্ছে সেটা যেটা এক জন মানুষের আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে অপর আরেকজন মানুষ তার হৃদয়ের অন্তর্স্থল থেকে একজন মানুষের প্রতি নিজের আনুগত্য কে স্বীকার করে।
তাহলে এখন আপনি ভাবুন যে এই সম্মানটা অর্জনের জন্য আপনার ধনী হওয়াটা বেশি জরুরি নাকি নিজেকে সম্মানের যোগ্য অধীকারি হিসেবে গড়ে তোলা বেশি জরুরি। এখানে সম্মান প্রাপ্ত হওয়ার জন্য যে জিনিষ দরকার সেটা প্রাকৃতিক ভাবেই আল্লাহ সবাইকে দিয়েছে। আর আমরা সেটাকে কিভাবে পরিচালনা করব তার নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে আমাদের হাতে।
সমাজের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ - Differences between people in society
সামগ্রিক ভাবে আমরা যতই বলি সমাজের সবাই সমান। আসলে কিন্তু সবাই সমান না। আচ্ছা ধরুন সমাজের একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমরা একজন লোককে বাছাই করব। তখন কি আপনি বলবেন যে সবাই তো সমান। যে কেউ একজন কে নিলেই হয়। নিশ্চয় এটা বলবেন না আপনি। কারণ আপনি চাইবেন সেই কাজটা করার জন্য যে যোগ্য তাকেই সেই কাজ দেওয়া উচিত। এখানেই কিন্তু ভেদাভদের একটা বিষয় লক্ষা করা যায়। যে সবাই মানুষ হিসেবে সমান হলে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাই সমান না।
আল্লাহ যদি সবাই কে সমান বানাতো তাহলে কি হত? - What would happen if Allah made everyone equal?
আমরা কিছু সময়ের জন্য ধরে নেই এই পৃথিবীতে সবাই সমান। সবার সমান টাকা পয়সা আছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকার্গবার্গ, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্টাতা বিল গেটস, আম্যাজনের মালিক জেফ বেজোস, স্কয়ার কোম্পানির মালিক স্যামসন এইচ চৌধুরী, প্রবাসী রফিফুল ইসলাম, পাশের গলির রিকশাচালক সুজন মিয়াঁ। এছাড়া এই দুনিয়ায় যত ধরনের যত পেশার মানুষ আছে। সবাইকে এখানে মেনশন দিলাম।ধরে নিলাম এরা সবাই সমান। সবারই ১০০ কোটি টাকা আছে। ধনী গরীব কোন ভেদাভেদ নাই। থাকার তো কথাও না । কারণ সবারই ১০০ কোটি টাকা আছে।
ও আর হ্যা এর মধ্যে কিন্তু আপনিও আছেন। আপনার কাছেও ১০০ কোটি টাকা আছে। ভাবা যায়। এখন হলো আসল খেলা। হটাৎ করেই আপনার আপনার ক্ষুদা লেগে গেলো । ঘরে খাবার না থাকায় আপনি সোজা চলে গেলেন হোটেলে। কিন্তু লাভ হলো না। কারণ সেখানে হোটেলের জায়গায় কোন মানুষ নাই। কারণ তার কাছেও ১০০ কোটি টাকা আছে। তার কার টাকা দরকার নাই। সে এই টাকা দিয়ে সারাজীবন পায়ের উপর পা দিয়ে চলতে পারবে।
এভাবে সুজন মিয়াঁ আর রিকশা চালায় না। স্কয়ার আর কোন প্রডাক্ট বানায় না। জুকার্কবার্গের ফেসবুক কেউ আর চালায় না। কারণ এখন সয়ারই আলাদা আলাদা ফেসবুক আছে। এভাবে সবাই সবার মত। কারো কাছে কেউ দ্বায় বদ্ধ নেই। ওয়েট! আপনাকে আর সামনে যেতে হবে না।
আপনি এখন একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন যে কি হচ্ছে তখন এই পৃথিবীতে। পৃথিবী কি চলবে নাকি আটকে যাবে? থাক টেনশন করে নিজের ঘিলুটার অপব্যবহার করার দরকার নাই। আমিই বলে দিচ্ছি।
পৃথিবী তখন চলবে না। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াবে সব কাজ কর্ম। কার চাহিদা কে পূরণ করবে?
আমি এখানে শুধুমাত্র একটা গল্পের দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আমার স্বল্প জ্ঞানের উদাহরণ হয়ত আপনাদের বুঝাতে আমি অক্ষম। তারপরেও আশা করি বুঝতে পারবেন। যে এই পৃথীবীতে সব কিছুরই একটা ভারসম্য দরকার আছে। ভারসম্য না হলে কোন কিছুই সঠিক ভাবে চলতে পারে না।
আমার জীবনে কেন এত কষ্ট - Why is there so much trouble in my life?
সুখের সময় যেন চোখের পলক পরার আগেই এক নিমিষে তার পাখা মেলে উড়াল দেয় দূর আকাশে। আর দুখের সময় যেন প্রতিটা সেকেন্ড ১ বছর মনে হয়। আমরা ভাবি যে কেন আমার এত কষ্ট? আসলে আপনাকে বুঝতে হবে যে কষ্ট কি শুধু আমার ? নাকি অন্যসব মানুষেরও আমার চেয়ে বেশি কষ্ট আছে? এটা ভাবলে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবে। আমরা যেন কষ্ট বলতে টাকা পয়সার কষ্টকেই মূখ্য বিষয় মনে করি। কিন্তু যার হাজার হাজার কোটি টাকা আছে তার ও কষ্ট আছে। না হলে কি আর বিল গেটসের মত লোকের বউ থাকেনা।
কষ্ট সবার জীবনেই আছে। তবে সেই কষ্টকে মানিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তিল তিল করে নিজের জীবন পরিচালনার মাঝেই আসল তৃপ্তি পাওয়া যায়। সোনার চামক মুখে নিয়ে অন্যের টাকায় নিজের চাহিদা পূরণে সুখ থাকলেও মর্যাদার কিছু নাই। আপনি নিজে টাকা উপার্জন করে ৫০০ টাকা দিয়ে শার্ট কিনে যে মজা পাবেন সেটা বাবার ৫০০০ হাজার টাকায় কেনা শার্টে পাবেন না।
সুখের জন্য কি লাগে?
মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে আসলে সুখী হওয়ার জন্য কি দরকার? আমি বলি যে আসলে সুখী হওয়ার জন্য সন্তুষ্টি হচ্ছে সব চেয়ে বড় হাতিয়ার। আপনি যদি অল্পতে সন্তুষ্টি হতে পারেন তাহলে আপনি সবার চেয়ে বেশি সুখী। সুস্থ শরীর হচ্ছে মানুষের সব চেয়ে বড় সম্পদ। ধরুন আপনাকে আপনাকে এক কোটি টাকা দেওয়া হলো আর সেই সাথে ক্যান্সার। আপনি কি কখনোই সেই এক কোটি টাকা নিবেন? মনে হয় না। তাই আপনাকে দেখতে হবে যে সুখী হওয়ার জন্য যা দরকার সেটা আমার কাছে আছে নাকি।
শেষ কথা - Last Word
আসলে আমরা যতই বলি সুখ সুখ। কেউ আসলে সুখে নাই। কেউ তার নিজের অবস্থানে সুখী না। যার যত বেশি আছে সে আরো বেশি চায়। এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের সব সময় অল্পতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তাহলে আশা করি যায় আমরা সুখের নাগাল পেতে পারি।
Post a Comment
image video quote pre code